৭৮ বছর বয়সি রিপাবলিকান নেতা সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তিনি হোয়াইট হাউজে ফিরে প্রথম দিন থেকেই ‘দ্রুততার’ সঙ্গে কাজ শুরু করবেন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) দুপুরে আমেরিকার ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের ৪ বছরের পর্দা নামবে এবং আমরা আমেরিকার শক্তি ও সমৃদ্ধির একটি নতুন দিন শুরু করব। আমি অভাবনীয় দ্রুততা ও শক্তির সঙ্গে কাজ করব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সমস্যা সমাধান করব।’ তিনি বলেন, এবার চিরতরে আমরা ওয়াশিংটন থেকে ব্যর্থ এবং দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক স্থাপনার অবসান ঘটাব।
ঘণ্টাব্যাপী ভাষণে ট্রাম্প মূলত অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক আন্দোলন। ৭৫ দিন আগে, আমরা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের দেশ কখনো এমনটা দেখেনি। আগামীকাল থেকে, আমি ঐতিহাসিক শক্তি প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সংকটের সমাধান করব।’
ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া, পরিবেশ রক্ষায় নিয়মের কড়াকড়ি কমানো এবং ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে প্রথমে রাখব, আর কাল থেকেই এর কাজ শুরু হবে। আপনারা আগামীকাল টেলিভিশন দেখে অনেক মজা পাবেন।’
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে এটি ওয়াশিংটনে দেওয়া ট্রাম্পের প্রথম বড় ভাষণ। ওই ভাষণের পর ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ক্ষমা করে দেবেন।
সোমবার দুপুরে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘বাইডেন প্রশাসনের প্রতিটি উগ্র ও নির্বোধ নির্বাহী আদেশ’ বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। একটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার ট্রাম্প ২০০টির বেশি নির্বাহী পদক্ষেপ নেবেন। আরেকটি সূত্র বলেছে, ট্রাম্প প্রথম যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, সেগুলোর মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দেওয়া, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি পুনর্বহালের দিকে অগ্রসর হওয়া। ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতির আওতায় মেক্সিকোর নন, এমন আশ্রয় প্রার্থীরা মার্কিন আদালতের তারিখ পেতে সেখানেই অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নত করা, সরকারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি বিভাগ গঠন করা (ডিপাটমেন্ট অব গর্ভনমেন্ট ইফেসিয়েন্সি-ডিওজিই), সামরিক বাহিনীকে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া এবং সেনাবাহিনী থেকে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি নীতি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রাম্প জনএফ কেনেডি, রবার্ট কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রোববারের বিজয় সমাবেশে ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক এবং এরিকের স্ত্রী লারা ট্রাম্পও মঞ্চে যোগ দেন। এর আগে ট্রাম্প আরলিংটন জাতীয় সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। সেখানে ‘টম্ব অব দ্য আননোন সোলজার’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় তার সঙ্গে ছিলেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
রোববারের তুষারপাত এবং প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে সোমবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাইরে করা হয়নি। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্যাপিটলের ভেতরে সরিয়ে নেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের দিন সোমবার তাপমাত্রা ছিল প্রায় হিমাঙ্কের ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫ হাজার সদস্য এ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করেন।