মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের ব্যস্ততম সড়ক আল-আমিন কমপ্লেক্সের সামনে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। দোকানের রঙিন আলোয় জমে উঠেছে কেনাকাটার ভিড়। হঠাৎই চিৎকার ভেসে এলো এক কিশোরীর গলা থেকে "আমাকে ছাড়ুন! আমাকে ধরবেন না!
"উপস্থিত চারপাশে থাকা মানুষজন এক মুহূর্ত থমকে গেল। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী ভয় আর বিস্ময়ে কেঁপে উঠছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ভাই ভয় পেয়ে গেছে। সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণ, বগুড়ার সুনামধন্য বেসরকারী একটি স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আলভি, যার চোখে দানবীয় এক ধৃষ্টতা। সে জোর করে মেয়েটির হাত ধরে টান দিচ্ছিল। "আমি তোমাকে ভালোবাসি! তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না!" আলভির মুখে অদ্ভুত এক দাবি। কিন্তু মেয়েটির মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তার ভাই ততক্ষণে বোনকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আশপাশের মানুষজন যখন বুঝতে পারল, তখনই সবাই একসঙ্গে এগিয়ে এলো। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজিত জনতা আলভিকে ঘিরে ধরল। কেউ একজন বলল,"ভালোবাসা জোর করে হয় নাকি?!"আলভি তখনও নিজের দোষ ঢাকতে চাইছিল।
কিন্তু মেয়েটির স্পষ্ট অভিযোগ আর উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে তার কোনো কথা কাজে আসছিল না। উত্তেজিত জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল, শুরু হলো গণধোলাই। এরই মধ্যে কেউ একজন পুলিশের খবর দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। আহত ও ভয়ানক বিব্রত আলভিকে টেনে তুলল তারা।
ফাঁড়িতে নিয়ে আসার পর দুই পক্ষের অভিভাবকরাও সেখানে হাজির হন। আলভির বাবা-মা হতভম্ব তারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে তাদের সন্তান এ ধরনের কাজ করতে পারে। অন্যদিকে মেয়েটির মা ও বাবা চোখের পানি ফেলছেন, বলছেন,"একটা মেয়ে কি রাস্তায় নিরাপদ নয়? এটাই কি আমাদের সমাজ?"আলভি তখনও বলার চেষ্টা করছে,"আমি ওকে ভালোবাসি! আমি কিছু ভুল করিনি!"কিন্তু সত্যিটা স্পষ্ট ভালোবাসা নামের ছদ্মবেশে সে যা করেছে, তা অপরাধের চেয়েও ভয়ংকর। কারণ, জোরপূর্বক ভালোবাসা আসলে আর কিছুই নয়, একধরনের সহিংসতা। রাত গভীর হয়, কিন্তু আলোচনার ঝড় থামে না। প্রশ্ন একটাই, আমাদের সমাজে কবে মেয়েরা নিরাপদ হবে?